গণমিত্র : সদ্য সদ্য দুর্গোৎসবকে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের ফলে সমগ্র শারদ উৎসব এবং তার সকল সঙ্গী মণ্ডপ,সঙ্গীত, আলো,খাওয়া দাওয়া থেকে অঙ্গসজ্জা সবই যেন আলোয় আলোকিত । সেই সময় বাংলার অহংকার তাঁতের শাড়িও অনেকটাই এগিয়ে রাখে বাংলা ও বাঙালী মহিলাদের। না এ শুধু কথার কথা নয়।
কবিগুরুর ‘স্বপ্ন’ কবিতার একটা লাইন ধার করতে ইচ্ছে হল– “চেয়ে দেখি, ঠোকা ঠুকি বরগা কড়িতে, কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে।” আর এই ছন্দের সাথে সাযুজ্য রেখে নিজের ভাবনায় উঠে এল — “মহাপুজো সাজিতেছে নারীর শাড়িতে!” যদিও এই লাইন লেখার সাহসটা এসেছিল গড়িয়াহাট মোড়ের থেকে কয়েক পা আগেই ১৩৯-বি, রাসবিহারী এভিনিউ-এর স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষের শরিক একটি শাড়ির দোকানে এসে।কবিগুরুর গদ্যছন্দে লেখা বিশেষ কাব্যগ্রন্থ-এর নামে নামাঙ্কিত এই দোকান শুধু ঐতিহ্যের পতাকাই বহন করছে না । বলতে গেলে মহিলাদের পোশাক বিপণীতে তিনপুরুষের প্রত্যাশা পূরণের সফল ছবি উঠে এলো দোকানের অন্দরে তারকাদের প্রাপ্তির মুখ গুলো দেখে। টলিউডের প্রখ্যাত অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত, মৌবনী সরকার,লাবনী সরকার,স্বাগতা মুখার্জি সহ অন্যান্যদের পাশাপাশি সাধারণ ক্রেতাদের পছন্দের বেনারসী, ঢাকাই, জামদানী তাঁত,হ্যান্ডলুম, ব্লক প্রিন্টের শাড়ি ধারাবাহিক ভাবে তাদের হাতে তুলে দিতে পেরেছেন বলে মনে করেন এই দোকানের বর্তমান অধিকর্তা রাই চৌধুরী।
দোকানের উপচে পড়া ভিড়ের মাঝেই জনপ্রিয় এক রেডিও চ্যানেলের সঞ্চালক রাই জানান যে স্বাধীনতার আগে তার ঠাকুরদাদা রামদাস চৌধুরী ও পরবর্তীতে তার ঠাকুমা বেলারাণী চৌধুরী, বাবা উত্তম চৌধুরী ও মা সুপর্ণা চৌধুরী-র হাত ধরেই মহিলাদের পছন্দের সেরা শাড়ি তুলে দিতে পেরেছেন বলেই শ্যামলীর এত জনপ্রিয়তা।আর তার পরিবর্তে মানুষের পরিতৃপ্তির হাসি যে কখন তার নিজের পেশার পাশাপাশি এই দোকানকে তার আরও কাছের করে তুলেছে তা তিনি নিজেও জানেন না। তবে শুধুমাত্র আকর্ষণীয় ব্লক প্রিন্টের শাড়িই নয়। ওই দোকানে মাঝে মাঝেই মানুষের ভিড় জমে ওঠে কখনও গাউন,কখনও কাফতান, সহ নানান এথনিক পোশাকের জন্য। ক্রেতাদের মতে জনপ্রিয়তার অলিন্দে থাকা শ্যামলী-র প্রতিষ্ঠাতাদের উত্তরসূরী রাই চোধুরী-র নিজস্ব সৃজনশীল চর্চাই যেন প্রভাব ফেলেছে তার শাড়ির সম্ভারে। যার জন্য আজকের তিলোত্তমা কলকাতার শপিং মলের চেনা হাতছানি ছেড়ে বহু মানুষ তার সাধের জিনিসটি কিনতে হাজির হচ্ছে পরম্পরার এই প্রাচীন বিপণীতে।